গ্ল্যাডিয়েটর
২০০০ সালের রাসেল ক্রো অভিনীত জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের মধ্যে একটি ছিল গ্ল্যাডিয়েটর। গ্লাডিয়েটর মানে “শাসক ও সামন্ত প্রভুদের মনোরঞ্জনের জন্য মল্লভূমিতে প্রাণপণ যুদ্ধে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্রীতদাস।” ফিল্মটি রোমান জেনারেল ম্যাক্সিমাসকে কেন্দ্র করে তৈরি, যিনি যে কোনও কিছুর মূল্যে তার সততাকে বজায় রাখতেন।
তার মৃত্যুর ঠিক আগে মার্কাস অরেলিয়াস ম্যাক্সিমাসকে তার স্বপ্নের কথা বলেন যে শাসন ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে আর ম্যাক্সিমাসকে রোমের রক্ষক হয়ে তা জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া তাকে নিশ্চিত করতে বলেন। ম্যাক্সিমাস উত্তরে বলেন যে, তিনি তা করতে পারবেন না, কারণ সে কখনই রোমে বসবাস করেনি বা সে সিনেটর পদের কেউ নন।
এছাড়া তিনি সম্রাজ্যের ক্ষমতা চান না। সে কেবল যুদ্ধ থেকে বাড়ি ফিরে তার খামারে তার পরিবারের সাথে জীবন শুরু করতে চায়। অরেলিয়াস উত্তর দেন “ তুমি তা চাও না বলেই তা তোমাকে গ্রহণ করতে হবে।” অরেলিয়াস ম্যাক্সিমাসের মাঝে সততা লক্ষ্য করেন।
এই সততা অরেলিয়াসের ক্ষমতার জন্য মরিয়া হয়ে উঠা পুত্র কমোডোসের সম্পূর্ণ বিপরীতে দাঁড়িয়েছিল। কমোডোস সম্রাটের উপাধি অর্জনের জন্য যেকোনো কিছু করার জন্য প্রস্তুত, এমনকি তার জন্য তার বাবাকে হত্যা করতেও দ্বিধাবোধ করেন নি।
ম্যাক্সিমাসকে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে দেখে কমোডোস তাকে, তার স্ত্রী এবং তার ছোট ছেলেকেও হত্যা করার নির্দেশ দেন। ম্যাক্সিমাস পালিয়ে রক্ষা পেলেও সে তার পরিবারকে বাঁচাতে পারেনি। তাকে বন্দী করে দাসত্বে বিক্রি করা হয় এবং গ্ল্যাডিয়েটর হিসেবে লড়াই করতে বাধ্য করা হয়।
ম্যাক্সিমাস লড়ায়ের ঘেরে তার সাথে মুখোমুখি হওয়া প্রত্যেকের সাথে অত্যন্ত উচ্চতর ক্ষমতার সাথে লড়াই করেন এবং অবশেষে রোমে আসেন যেখানে তিনি মানুষের মধ্যে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। যখন তার আসল পরিচয় প্রকাশিত তার খ্যাতি আবার তাকে সম্রাটের মুখোমুখি করে যুদ্ধে।
কমোডোসের প্রতিপক্ষ, যারা অরেলিয়াসের মতো সম্রাজ্যের ক্ষমতা জনগণের ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিল তারা ম্যাক্সিমাসকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দেওয় আর তার তার সেনাবাহিনীতে ফিরি নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করে। তারা চিন্তা করেছিল যে তারপর ম্যাক্সিমাস রোমের দিকে অগ্রসর হয়ে রোম দখল করে সিনেটের নিকট ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করে দিয়ে তারপর চলে যাবেন। মার্কাস অরেলিয়াসের মতো রোমের সিনেটররাও ম্যাক্সিমাসের সততার প্রতি এতটাই আত্মবিশ্বাসী যে তারা বিশ্বাস করেছিলো যে ক্ষমতা অর্জনের পর তিনি তা নিজের হাতে না রেখে জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে চলে যাবেন।
চলচ্চিত্রটির চরম পরিণতি বা ক্লাইমেক্সে দেখা যায় যে কমোডোস নিজেই গ্ল্যাডিয়েটর ম্যাক্সিমাসের সাথে লড়াই করে যেখান দু’জনই মারা যান আর তাতে করে সম্রাজ্যের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরে যায়।
ম্যাক্সিমাসের সততার চাবিকাঠি কি? তা চলচ্চিত্রের প্রথমদিকে প্রকাশিত হয় যেখানে তিনি তার সৈন্যদের কাছে চিৎকার করে বলেছিলেন, “আমরা এই জীবনে যা করি তা অনন্তকালে প্রতিধ্বনি রেখে যায়।”
আমরা আমাদের জীবনে যাই করি না কেনো তা অনন্তকাল ধারে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। তাই সততা আর দায়বদ্ধতা সাথে আমাদের জীবনযাপন করার জরুরি যার প্রতিদান আমরা নিশ্চয় পরবর্তীতে গ্রহণ করি।
⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯⎯