আমাদের মাঝে এমন কে আছে যে কম্পিউটার ছাড়া বাঁচতে পারবে? মনে হচ্ছে
কম্পিউটারের অবস্থান এখন সবখানে-আমাদের পড়া-লেখা করার ঘরে, কর্মক্ষেত্রে আমাদের ডেস্কে,
লাইব্রেরিতে, ব্যাংকে এবং এমনকি ক্যাফেতেও কম্পিউটার। কম্পিউটর আমাদের আনন্দ দেয়, আমরা
কম্পিউটারের নত হই, কম্পিউটার আমাদের প্রয়োজন।
তবে কম্পিউটার বস্তুটি একটি সাম্প্রতিক জিনিস। মাত্র তিন প্রজন্ম আগেও
IBM এর চেয়ারম্যান ঘোষণা দিয়েছিলেন যে বিশ্ব বাজার মাত্র পাঁচটি কম্পিউটার বিক্রয় হয়।
এই তো মাত্র ১৯৭৭ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের কম্পিউটার সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী Digital
Equipment কর্পোরেশনের সভাপতি দাবি করেছিলেন যে লোকজন কেনো বাসাবাড়িতে কম্পিউটার প্রত্যাশা
করবে তার কোনও কারণ নেই!
অ্যাপল কম্পিউটারের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস এর হাত ধরেই এই কম্পিউটার
বিপ্লব বিপ্লব আমাদের পর্যন্ত এসেছে। এ্যাপল কম্পিউটার যখন আবিষ্কার করা হয় তখন স্টিভ
জবস এবং স্টিভ ওযনিয়াকের এর বয়স ছিল মাত্র ২১ বছর। তখন পর্যন্ত কম্পিউটার ছিল বায়ুশূন্য
টিউব বা নল বিশেষের বৃহদাকার এক স্তূপ যা পুরো কয়েকটি কক্ষ দখল করে নিত। তারপর দুই
স্টিভ মিলে টিউব বা নলের স্তুপকে কোনো ডেস্কের উপর বসিয়ে রাখা যায় এমন আকৃতির ছোট একটি
বস্কের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হন।
জবস এবং ওযনিয়াক তাদের আবিষ্কারটি আটারি কর্পোরেশনে কাছে প্রস্তাব করেন।
তারা বড় কোনো অঙ্কের অর্থের প্রতি আগ্রহী ছিল না – বিনিময়ে তারা যা চেয়েছিল তা হল বেতন
আর তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ। কিন্তু আটারি কর্পোরেশন তাদের হতাশ করে। তারপর তারা
তাদের আবিষ্কারটি হিউলেট-প্যাকার্ডকে বা HP’র কাছে অফার করে, কিন্তু সংস্থাটিও তাদের
ফিরিয়ে দেয়। মনে হচ্ছিল কেবল জবস এবং ওযনিয়াক-ই এই আবিষ্কারের সম্ভাবনাকে দেখতে পাচ্ছিল।
তাই জবস তার ভক্সওয়েগন গাড়িটি এবং ওযনিয়াক তার ক্যালকুলেটরটি বিক্রি
করে যে ১৩০০ ডলার তারা পেয়েছিলেন তারা অ্যাপল কম্পিউটার গঠন করেন। কোনো এক আপেল বাগানে
জবস যে আনন্দময় গ্রীষ্মের সময়টি কাটিয়েছিলেন তার স্মৃতিতে কোম্পানির নাম এ্যাপল করা
হয়।
বাকিটা ইতিহাস। সব বিবেচনায় স্টিভ জবস একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, এবং সেই স্বপ্ন
দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি এক সফল কম্পিউটার কোম্পানি গড়ে তুলেন। তবে শীঘ্রই জবস আবিষ্কার
করেন যে যদি তার স্বপ্নকে সফলতায় রূপ হলে, তাদের আরও বেশি পরিচালনার দক্ষতার প্রয়োজন।
তাই জবস তৎকালীন পেপসিকোর প্রেসিডেন্ট জন স্কালির দ্বারস্থ হন।
স্কালি কেন বিশ্বের প্রভাবশালী কোনো সংস্থার উচ্চ বেতনের কোনো পদ ছেড়ে
কোনো অপরিপক্ষ, অনুন্নত একটি কারখানার একদল কম্পিউটার উৎসাহির সাথে কাজ করতে যাবেন
তার কোনও যুক্তি ছিল না। অবাক হওয়ার কিছু নেই যে তিনি জবসের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান
করেন। কিন্তু জবস স্কালির প্রত্যাখ্যানকে আমলে নেননি।
তিনি পুনরায় স্কালির দ্বারস্ত হন। পুনরায় স্কালি তাকে প্রত্যাখ্যান করেন।
শেষ প্রচেষ্টায় জবস আবেগপূর্ণভাবে তার দূরদর্শী পরিকল্পনা স্কালি কাছে উপস্থাপন করেন
আর স্কালিকে এমন একটি প্রশ্ন করে বসেছিলেন যা তাকে জবসের প্রস্তাব গ্রহণ করতে বাধ্য
করে। প্রশ্নটি ছিল “’তুমি কি তোমার বাকি জীবন কেবল চিনির শরবত বিক্রি করে ব্যয় করবে,
নাকি বিশ্বকে বদলে দেওয়ার কোনো সুযোগ পেতে চাও?”
“’তুমি কি তোমার বাকি জীবন কেবল চিনির শরবত বিক্রি করে ব্যয় করবে, নাকি
বিশ্বকে বদলে দেওয়ার কোনো সুযোগ পেতে চাও?” প্রকৃতপক্ষে জবস এবং স্কালি বিশ্বকে বদলে
দিয়েছেন।
মুরাল: সৃষ্টিকর্তা আমাদের একই প্রশ্ন করেন “তুমি কি তোমার জীবনের বাকিটা
সময় চিনি শরবত বিক্রি করে কাটাতে চাও, নাকি পৃথিবীকে পরিবর্তন করার সুযোগ পেতে চাও?”
আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই চিনির শরবত তৈরি করে আমাদের জীবন কাটিয়ে দেই গতানুগতিক
কাজ-কর্মে।
আমরা চাই আমাদের ধনসম্পদ হোক, ঘরে বউ আসুক, প্রজন্ম আসুক। সবাই তার চারপাশের
মানুষ যা ভাবছে বা করছে তার দ্বারা প্রভাবিত আর নতুন চিন্তার ধারাকে গ্রহণ করতে অনীহা
প্রকাশ করি সহজেই। আসুন পৃথিবীকে, পৃথিবীর গতানুগতিক চিন্তাধারাকে দেই।
উৎস: Silicon Valley Story