সম্প্রতি সময়ের এবং পুনঃ ‘নিরাপদ সড়ক’ এর দাবিতে ছাত্র/ছাত্রীদের ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলন’ প্রতিবাদ কেবল ট্রাফিক সেক্টরের ত্রুটিপূর্ণ নিয়ম এবং ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে নই বরং পুরো আইনের শাসন সম্পর্কে অনেক কথা সহ এর দুর্নীতি, দুর্ব্যবহার, অনিয়ম, পক্ষপাতিত্ব, অসৎ আইন-প্রণয়নকারী, রাজনৈতিক বিবেচনা ব্যতীত আইনের প্রয়োগ অসম্ভবের কথা জানান দেয়। দেশব্যাপী শুরু হওয়া ২০১৮ এর আন্দোলন পুরু দেশকে অচল করে দেয় যখন দুর-পাল্লার যানবাহন সেবা সম্পূর্ণরূপে থেমে গিয়েছিল।
উচ্চ-মাধ্যমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সবাই ‘নিরাপদ সড়ক’ আন্দোলনে নিজেদের সম্পৃক্ত করে এবং ট্রাফিক আইন সংস্কার করে অপরাধী চালকদের যথাযথ শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে সড়ক নিরাপদ করতে সরকারের হস্তক্ষেপ না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলতে থাকে।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলন যেভাবে শুরু হয়
২৯ জুলাই ২০১৮ তে ঢাকার শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টন্টমেন্ট কলেজের ২ শিক্ষার্থীর বাস দুর্ঘটনায় প্রাণহানি আর আরও ৯ জনের আহত হওয়ার পর থেকে সারা দেশে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৮ মিলিয়ন শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ আন্দোলন করতে থাকে।
বারবার নিরপরাধ পথচারীরা মারা পড়ছে, জখম এবং পঙ্গুত্ব বরণ করছে, বারবার ‘নিরাপদ সড়ক’ প্রয়োজনীয়তা অনুভবকারী কিছু শিক্ষার্থী রাস্তায় নামে কেবল কর্তৃপক্ষের ফাঁকা বুলি শুনার জন্য। অপরাধী চালকদের প্রত্যাশিত শাস্তি, যথাযথ উপায়ে লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না এবং নেয়া হচ্ছে না যানবাহনের উপযুক্ততার পক্ষে পদক্ষেপ।
দ্বিতীয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ‘নিরাপদ সড়ক’ আন্দোলন শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দ্বারা যখন একটি যাত্রীবাহী একটি বাস ২০ মার্চ, ২০১৯ তারিখে রাস্তা পারাপারের সময় বাংলাদেশ প্রফেশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর উপর চড়াও হয়। প্রতিবেদনে বলা হয় যে ‘সুপ্রভাত পরিবহন’ বাসটি একই কোম্পানির আরেকটি বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ছিল। হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে কেবল ২০১৮ সালেই ৩,১০৩টি দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ৪,৪৩৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে। ২০১৯ সালের দুই ঈদের অবকাশে তিন মাসের মধ্যে ২৩২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭৩ জনের প্রাণহানী সহ ৮৪৯ জন জখন হয়েছে।
চালকদের মনস্তাত্ত্বিক এবং মানবিক উপাদান সমূহ:
যানবাহনের নিরাপদ চালনা মানে নিরাপদ সড়ক। সড়কে নিরাপদ চালনা বহু উপাদানের সমষ্টি। যানবাহনের যান্ত্রিক উপাদানের পাশাপাশি কিছু মানবীয় উপাদানকেও গুরুত্বের সাথে গ্রাহ্য করতে হবে। ২০১৬ সালে ক্যানাডার মন্ট্রিয়েলের ম্যাক-গিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ ট্রাফিক সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে এমন কিছু উপাদান খোজে পেয়েছেন, যে মানবীয় উপাদান সমূহ ৮৯ শতাংশ সংঘর্ষের সাথে সম্পৃক্ত। যে মানবীয় উপাদান সমূহ নিরাপদ যানবাহন চালনার সামর্থ্যের বিঘ্ন ঘটায় তার মধ্যে সুরা বা এলকোহল (এলকোহলে বিঘ্নিত হয়ে যানবাহন চালনা), অবসাদ এবং নিদ্রা দূষিতা, মোবাইল ফোন আর যাত্রীদের দ্বারা বিভ্রান্ত হওয়া হল কিছু বৈশিষ্ট্য ট্রাফিক সড়ক দুর্ঘটনার কারণ খোজে বের করতে বিভিন্ন গবেষণামূলক এবং তত্ত্বীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে গবেষকেরা খোজে পেয়েছে যে লোকসমুহ বিগত ১২ মাসে কমপক্ষে একটি ট্রাফিক সড়ক দুর্ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা ছিল তারা যারা অতীতে কোন ধরনের ট্রাফিক সড়ক দুর্ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা ছিল না তাদের চেয়ে অধিক অতি-গতিতে, বেপরোয়া চালনা আর বিঘ্নতার মাঝে গাড়ি চালায়।
অধিকন্তু, অদক্ষ ড্রাইভিং, অপরিপক্বদের মোটরযান পরিচালনা, বাড়তি মজুরির লক্ষ্যে একাধিক খেপ মারা, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ সুবিধার অভাব, সড়কে ট্রাফিক পুলিশদের চাঁদাবাজি, অতিরিক্ত গতি, ঔষধি বা বিনোদনের উদ্দেশ্যে ঔষধ সেবন, অবসাদ, মানবীয় সহ্য শক্তি, টু-হুইল যান ব্যবহারকারীদের ক্রাশ হেলমেট না পরা, অল্প বয়সী চালকদের ঝুঁকিপূর্ণ ড্রাইভিং, সংবেদন নির্ভর মোটর পরিচালনা, মাদক সেবন সহ ড্রাইভারদের মনস্তাত্ত্বিক আচরণকে কখনো অবহেলা করার মতো নই। নিম্নে স্বল্প ব্যাখ্যায় বিশেষজ্ঞদের সাধারণ কিছু ট্রাফিক সড়ক দুর্ঘটনার কারণ বর্ণিত হল:
অল্প বয়স্কদের ঝুঁকিপূর্ণ ড্রাইভিং:
আক্রমণাত্মক ড্রাইভিং, দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো এবং ট্রাফিক আইন অমান্য করা ঝুঁকিপূর্ণ ড্রাইভিং আচরণের আওতায় পড়ে। এসবের মধ্যে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো সবচেয়ে সাধারণ এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ আচরণ যা ট্রাফিক সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। তারুণ্য এবং ট্রাফিক সড়ক দুর্ঘটনার মধ্যকার সম্পৃক্ততা অনভিজ্ঞতার কারণ। অপরিপক্ব ড্রাইভারেরা প্রায়শঃ বয়স্ক ড্রাইভারদের চেয়ে অধিক ট্রাফিক সড়ক দুর্ঘটনা এবং মারাত্মক দুর্ঘটনার সাথে জড়িত।
২০১১ সালের হিসেব মতে ৩৪ বছরের নিচে ড্রাইভারেরা সারা বিশ্বে ট্রাফিক সড়ক দুর্ঘটনার ৪৫ শতাংশ মর্মান্তিক, ৫০ শতাংশ আহত এবং ৪৯ শতাংশ সম্পদ হানীর জন্য দায়ী।
ব্রিজবেইনের ব্রিটিশ সাইকোলজিকল সোসাইটি কর্তৃক পরিচালিত অন্য একটি গবেষণা বলে যে, “মোটরাইজড দেশ সমূহে শিক্ষানবিশ ড্রাইভারেরা সাধারণত কিশোর বয়সের। সড়ক দুর্ঘটনার সাথে তাদের সম্পৃক্ততা আনুপাতিক হারে বেশি, যা এমন একটি ঘটনা যেটি সম্প্রতি সময়ে সমস্ত চালকদের ক্রমবর্ধমান হারে হ্রাস হতে থাকা দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও পরিলক্ষিত। কম বয়সী শিক্ষানবিশ ড্রাইভারেরা তাদের পিতা বা সমকক্ষ ব্যক্তিদের দ্বারাও প্রভাবিত হয়ে থাকে। বিশেষ করে, ঝুঁকিপূর্ণ ড্রাইভিং তাদের পিতাদের দ্বারা স্থাপিত দৃষ্টান্তে প্রভাবিত হয়ে কম বয়সী শিক্ষানবিশ ড্রাইভারেরা তাদেরকে অনুকরণ করে, এবং কম বয়সী শিক্ষানবিশ ড্রাইভারেরা যাত্রী কর্তৃক অনুরোধের চাপ অনুভব করে ঝুঁকিপূর্ণ গাড়ি চালনার পদক্ষেপ নেই”।
সংবেদন সন্ধানী যান পরিচালনা:
সংবেদন সন্ধানী আচরণ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ ড্রাইভিং স্বভাবের সাথে সম্পৃক্ত যা ট্রাফিক সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যেমন, দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো এবং ট্রাফিক সড়ক দুর্ঘটনা উচ্চ মাত্রার সংবেদনের সাথে সম্পৃক্ত। একইভাবে, আবেগপ্রবণতা ঝুঁকিপূর্ণ এবং মদ্যপ অবস্থায় ড্রাইভিং এর সাথে যুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সংবেদন সন্ধানী প্রবণতা এবং আবেগপ্রবণতার বৈশিষ্ট্য সমূহের সাথে জৈবিক ভিত্তির সম্পর্ক রয়েছে। যেমন নিম্ন মাত্রার সংবেদন সন্ধানীদের তুলনায় উচ্চ মাত্রার সংবেদন সন্ধানী ব্যক্তিদের fMRI (functional Magnetic Resonance Imaging) পরীক্ষায় মস্তিষ্কের insula, posterior medial orbitofrontal and prefrontal cortex অঞ্চল সমূহ যা উদ্দীপনা আর Reinforcement এর সাথে সংযুক্ত তাতে উচ্চ-উত্তেজনা উদ্দীপনার প্রতি অধিকতর শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়।
আবেগপ্রবণতা’র (impulsivity) উপর Neuroimaging গবেষণা উত্তেজনা আবেগপ্রবণতার সাথে সম্পৃক্ত মস্তিষ্কের prefrontal cortex insula, anterior cingulate cortex, and amygdala অঞ্চল সমূহের সম্পৃক্ততা প্রকাশ করে। মস্তিষ্কের এই ক্ষেত্র সমূহ, বিশেষ করে prefrontal cortex, কার্যনির্বাহী কার্যক্রমের সাথে সংযুক্ত। প্রকৃতপক্ষে, মস্তিষ্কে জখম বা prefrontal cortex কে প্রভাবিত করা অস্বাভাবিক রোগ আক্রান্ত রোগীদের অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার এবং তাদের কর্মের নেতিবাচক পরিণামকে উপেক্ষা করার প্রবণতা বিদ্যমান। এই সংবেদন সন্ধানী এবং আবেগপ্রবণতা ঝুঁকিপূর্ণ যান চালনা বাড়িয়ে দেয় যা একটি বিস্তৃত সম্ভাব্য পুরস্কারের সাথে সংযুক্ত আর যা ‘নিরাপদ সড়ক’ কে প্রভাবিত করতে পারে। কম বয়সী শিক্ষানবিশ ড্রাইভারদের ক্ষেত্রে বিশেষ উদ্বেগ হচ্ছে তাদের কাম্য প্রবল আবেগ। এই আবেগের মধ্যে রয়েছে উত্তেজনা আর শক্তি, ঝুঁকিপূর্ণ যান চালনা, আইন অমান্যকারী কাজ এবং দুর্ঘটনার সাথে যেগুলোর সম্পৃক্ততা মিলেছে বারংবার।
দৃশ্যত:, কোন মারাত্মক দুর্ঘটনার পর যখন তদন্ত করা হয় তখন দেখা যায় যে সে দুর্ঘটনার পেছনের মূল কারণ হল চালকেরা অল্প বয়সী শিক্ষানবিশ যারা সাধারণত চালকদের সাহায্যকারী বা helper। সংবেদশীল আচরণ যে মোটর চালনায় ঝুঁকি আর অধিক অর্থ জড়িত সেখানে তা অল্প বয়সী শিক্ষানবিশ চালকদের দ্বারা প্রদর্শিত হয়।
এলকোহল বা মাদক সেবন:
মোটরযান পরিচালনায় জন্য সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিভিন্ন উপাদানের সমষ্টি এবং বহুবিধ Cognitive বা জ্ঞান সম্পর্কীয় উৎসের মূল্যায়ন আর আচরণগত তত্ত্ব প্রয়োজন । নির্বাহী আর মানসিক (যা মানসিক প্রক্রিয়ার সাথে চলাফেরা বা পেশীসংক্রান্ত কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত) ক্রিয়া সমূহ পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত এবং মস্তিষ্কের সম্পূর্ণ কার্যক্রমের সাথে গলাগলি-ভাবে সম্পৃক্ত। নির্বাহী ক্রিয়াকে জ্ঞান সম্পর্কীয় একদল দক্ষতা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয় যা কোন উদ্দেশ্যমূলক, লক্ষ্য-চালিত আচরণ যেমন নিবারণ, জ্ঞানীয় নমনীয়তা, কর্ম সাধনের স্মৃতি শক্তি, এবং পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করার জন্য দায়ী। Psychomotor Function বা মানসিক কার্যক্রম হল নির্বাহী ক্রিয়া এবং শারীরিক চলাফেরা যেমন সমন্বয়, চলাচল প্রক্রিয়া, নৈপুণ্যটা, শক্তি, গতি এবং সূক্ষ্ম মটর দক্ষতার মধ্যকার একটি সম্পর্ক।
মাদক সেবন মস্তিষ্কের Frontal cortex, Anterior cingulate cortex, Insula, Cerebellum অঞ্চল সমূহকে প্রভাবিত করে যার কারণে সেবনকারীদের নির্বাহী ক্রিয়া এবং মানসিক নিয়ন্ত্রণ কর্মক্ষমতা ব্যাহত হয়। বিশেষ ড্রাইভিং দক্ষতার ক্ষেত্রে মাদকের ডোজ হ্রাসপ্রাপ্ত মনোযোগ বিভক্তির, বর্ধিত মিশ্র প্রতিক্রিয়া সময় (Reaction Time) (প্রতিক্রিয়া সময় হল দুই বা ততোধিক উদ্দীপনার প্রতি সাড়া দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সময়) সামর্থ্য, হ্রাসপ্রাপ্ত অনুসরণ করার কার্য ক্ষমতা (যেমন সড়কে অবস্থান বজায় রাখার ক্ষমতা), হ্রাসকৃত বিপদ উপলব্ধি ক্ষমতার সাথে সংযোগ রয়েছে। এমনকি ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি পরিমাণের মাদক সেবনের পর বয়স্ক চালকদের তুলনায়, অল্প বয়সী শিক্ষানবিশ চালকগুলি, বিশেষভাবে, জ্ঞানীয় বিকলতা, স্মৃতি শক্তির ত্রুটি, বিভক্ত মনোযোগ এবং ভিজুঅস্পেশাল (বস্তুর দৃষ্টিলব্ধ ধারণা) ঘাটতির উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, “সমস্ত সড়ক মৃত্যুর মধ্যে ৫ থেকে ৩৫ শতাংশই মাদক সম্পর্কিত বলে তদন্তে বলা হয়। মাদক সেবনের পর ড্রাইভিং দুর্ঘটনা এবং এর প্রবলতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে। ছোট, বড় যে কোন পরিমাণের মাদন সেবন ড্রাইভিং আচরণকে ব্যাহত করতে দেখা গেছে, এবং সাধারণ চালকদের জন্য ০.০৫জি/ডিএল এর বেশী মাত্রার মাদক দ্রুত আর উল্লেখযোগ্য হারে ঝুঁকি বৃদ্ধির কারণ। ০.১জি/ডিএল থেকে ০.০৫জি/ডিএল এ ব্লাড এলকোহল কন্সাম্পশন হ্রাসকরণ মাদক সম্পর্কিত সড়ক দুর্ঘটনা ৬-১৮ শতাংশ হ্রাসের কারণ হতে পারে”।
মনস্তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য: ঝুঁকিপূর্ণ ড্রাইভিং আচরণের সাথে ব্যক্তির সংবেদন সন্ধানী তাড়না এবং তাদের মনস্তাত্ত্বিক বেদনার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে যা উদ্বিগ্নতা আর বিষণ্ণতা দ্বারা পরিলক্ষিত। ড্রাইভিঙের সাথে যুক্ত পুরস্কার সুদ্ধ আনন্দদায়ক সংবেদনের অভিজ্ঞতা যেমন উত্তেজনা আর সহচরদের মধ্যে সামাজিক মর্যাদাও তরুণ বয়সী চালকদের ড্রাইভিং আচরণের উপর প্রভাব প্রতীয়মান। এই সুবিধাবাদী ধারণা সমূহকে সাধারণভাবে পুরস্কারের প্রতি সংবেদনশীলতা এবং শাস্তির প্রতি সংবেদনশীলতা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে যা ব্যক্তিত্ব তত্ত্ব বা Theory Of Personality দ্বারা সমর্থিত যা মূলত স্নায়ু-মনস্তাত্ত্বিক এবং আচরণগত সক্রিয়করণ এবং নিরোধ প্রক্রিয়ায় বিবৃত, Reinforcement Sensitivity Theory’র তিনটি প্রক্রিয়ার দুটি প্রক্রিয়া।
ব্যক্তিত্ব তত্ত্বের Reinforcement Sensitivity তত্ত্বটি যুক্তরাজ্যের মনোবিজ্ঞানী জেফ্রে গ্রে কর্তৃক প্রস্তাব করা হয়েছিল যাতে তিনি ৩টি স্নায়ু-মনস্তাত্ত্বিক নিয়ম সংযুক্ত করেছিলেন যা কোন ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের মৌলিক সত্তা। এই নিয়মগুলির ২টি তরুণ বয়সী চালকদের ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের সাথে সম্পৃক্ত: ক) Behavioural Activation System এবং খ) Behavioural Inhibition System । তারা একে অন্যের নিকট অবিচ্ছেদ্য।
Behavioural Activation System এবং Behavioural Inhibition System প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা হিসেবে তাদের ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে, যেখানে Behavioural Inhibition System শাস্তি হিসেবে সংবেদনশীল এবং ফলশ্রুতিতে বৈরি পরিস্থিতিতে (অপ্রীতিকর উদ্দীপক যা আচরণে পরিবর্তন সাধিত করে) আচরণকে বাধাগ্রস্ত করে, আর Behavioural Activation System কে পুরস্কারের প্রতি সংবেদনশীল রূপে ধরা হয় বলে পুরস্কৃত মুহূর্তে আচরণকে সক্রিয় করে, যেমন যান চালনার সময়।
(পুরস্কার বা Reward হল এক গুচ্ছ মস্তিষ্ক কাঠামো এবং স্নায়ুবিক যাত্রাপথ যা প্রণোদনা সম্পর্কিত চেতনা যার মধ্যে আছে আনুষঙ্গিক জ্ঞান, Incentive Salience (যেমন প্রেরণা, কামনা, বাসনা বা প্রণোদনার আকাঙ্ক্ষা), ইতিবাচক স্বভাবজাত -বিশেষ করে যা আমাদের আনন্দের সাথে সম্পৃক্ত- আবেগের কারণ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পর্যালোচনায় প্রতি ১০০,০০০ মৃত্যুর হার
পুরস্কার/উদ্দীপনার প্রতি সংবেদনশীলতা অনুভূতি সন্ধানী ব্যক্তিগত প্রবৃত্তির প্রতি সংযুক্ত, এবং প্রত্যেকটি বৈশিষ্ট্য তরুণ বয়সী চালকদের স্বীয়-প্রতিবেদ্য ঝুঁকিপূর্ণ ড্রাইভিং আচরণের সাথে কঠোরভাবে সম্পৃক্ত। উদ্বিগ্নতা আর মানসিক অবসাদ শাস্তির প্রতি সংবেদনশীলতা এবং ঝুঁকিপূর্ণ ড্রাইভিং আচরণের সাথে কঠোরভাবে সম্পৃক্ত। মানসিক অবসাদ তরুণ বয়সী চালকদের স্বীয়-প্রতিবেদ্য ঝুঁকিপূর্ণ ড্রাইভিং আচরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বাভাস।
উচ্চ আয়ের দেশ সমূহে মৃত্যুর প্রধান ১০ কারণ
অধিকন্তু, ড্রাগ সেবনের ন্যায় উপাদান (বৈধ ঔষধাদি যেমন কাশির সিরাপ, এ্যান্টি-হিস্টামিন ট্যাবলেট যা তন্দ্রাচ্ছন্নতার কারণ হয়), অতিরিক্ত যান্ত্রিক গতি, নিজেকে জাহির করার লক্ষ্যে অন্যান্য গাড়ির সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক ড্রাইভিং, রেইচিং, যানবাহনের খুব নিকট দিয়ে আগ্রাসী ড্রাইভিং, বারংবার ওভারটেইকিং এর চেষ্টা, ড্রাইভিং এর সময় হাতে মোবাইলে কথা বলা, অসুস্থ অবস্থায় গাড়ি চালনা, সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ বা অতিরিক্ত উপার্জনের আশায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে যাত্রী বোঝায় করা, অদক্ষ বা হেল্পার বা ঘনবসতিপূর্ণ বা আবাসিক এলাকায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার বা কোন ব্যবসায় স্থাপনার সামনে দায়িত্বহীনভাবে গাড়ি চালানো হচ্ছে মারাত্মক এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ যা ট্রাফিক দুর্ঘটনার কারণ হয়ে উঠে।
সড়কে জনসাধারণের স্বাস্থ্য আর নিরাপত্তাকে অগ্রাহ্য করার পাশাপাশি প্রশাসনিক দায়বদ্ধতা এবং অপরাধী চালকদের জন্য শাস্তির বিধানের অভাব ঝুঁকিপূর্ণ মোটরযান পরিচালনাতে উৎসাহিত করে। ট্রাফিক সড়ক দুর্ঘটনার কারণ সারা বিশ্বে বছরে ৫১৮ বিলিয়ন ডলার ক্ষয়ক্ষতির কারণ, ক্যানাডার মতো উন্নত দেশে যা জাতীয় গড় উৎপাদনের প্রায় ১-৩ শতাংশ ।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও সড়ক ব্যবহারকারীদের প্রকারভেদে মৃত্যুর হার।
ট্রাফিক দুর্ঘটনা: মৃত্যুর একটি নতুন কারণ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার GLOBAL STATUS REPORT ON ROAD SAFETY 2018 এর তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে ‘মৃত্যুর শীর্ষ ১০ কারণ’ প্রেক্ষাপট আমাদের অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। ২০১৬ সালে ১,২৫০,০০০ দুর্ঘটনার কারণে সারা বিশ্বে ৫৭ মিলিয়ন মৃত্যু বরণ করেছে যা অর্ধেকেরও বেশি মানুষ মরেছে মৃত্যুর শীর্ষ ১০ কারণে। সারা বিশ্বে ডায়রিয়া জনিত ব্যাধির দরুন ১.৪ মিলিয়ন মৃত্যুর পাশাপাশি স্ট্রোক এবং হৃদযন্ত্র সম্পর্কিত ব্যাধি হল মৃত্যুর শীর্ষ ১০ কারণের প্রধানতম কারণ যা ১৫.২ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর কারণ হয় ২০১৬ সালে। ডায়রিয়া আর সড়ক-ট্রাফিক দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যুর সংখ্যা একেবারেই সমান: ১.৪ মিলিয়ন।
সড়ক দুর্ঘটনার মৃত ৫৪ ভাগই পথচারী, সাইকেল ও মোটর সাইকেল চালক
এই দ্বৈত ক্ষেত্র থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে ২০০০ সালে সড়ক-ট্রাফিক দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যুর কারণের অবস্থান ছিল ১০ম এ যা ২০১৬ তে ৮ম অবস্থানে উন্নীত হয়েছে, এবং ২০১৮ তেও যা ৮ম অবস্থানে রয়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পূর্বাভাস অনুযায়ী যদি সড়ক-ট্রাফিক দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যুর প্রবণতা বর্তমান অবস্থায় চলতে থাকে তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে তা ৫ম অবস্থানে চলে আসবে।
worldlifeexpectancy.com এর তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশের ৫০টি প্রধান মৃত্যুর কারণের মধ্যে কিডনি ব্যাধির পরপরই সড়ক-ট্রাফিক দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যুর অবস্থান ৯ম, যা প্রতি ১০০,০০০ জনে ১৫.৫৭ জন মানুষের মৃত্যুর কারণ আর এটি সমস্ত মৃত্যুর ২.৬২ শতাংশ। বিশ্ব ব্যাংক অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৩ তম। প্রায় ২,৩৯৪ জনের মৃত্যুর কারণ হয়ে ড্রাগ এবং পদার্থ অপব্যবহার বা substance abuse রয়েছে ৩৯ তম অবস্থানে যা গড়ে ০.৩০ জনের প্রাণহানির কারণ। সড়ক-ট্রাফিক দুর্ঘটনা মৃত্যুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতও যান নিয়ন্ত্রণ বা সড়কে বেপরোয়াভাবে যান চালনায় অপরাধী চালকদের যথাযথ শাস্তি বিধানের ক্ষেত্রে ভাল অবস্থানে নেই। বিশ্ব ব্যাংকের হিসেবে ভারতের অবস্থান ৬৭তে আর ভারতে সড়ক-ট্রাফিক দুর্ঘটনা মৃত্যুর হার প্রতি ১০০,০০০ জনে ২২.৫২ জন, কিন্তু আশ্চর্য হলও সত্যি যে দু’দেশের তুলনায় ট্রাফিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ এবং অপরাধী চালকদের শাস্তি বিধানের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের অবস্থান অনেক ভাল।
কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সমান পর্যায়ের আয়ের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অধিকতর ভাল দেখায়। অনুরূপ একটি আঞ্চলিক জোটের মধ্যে পাকিস্তান, নেপাল, কম্বোডিয়া আর ভারতের তুলনায় বাংলাদেশকে ভাল করতে দেখা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী বাংলাদেশে সড়ক-ট্রাফিক দুর্ঘটনা মৃত্যুর সংখ্যা প্রতি ১০০,০০০ এ ১৪.৬ যার মানে দেশের মোট জনসংখ্যায় গড় মৃতের সংখ্যা ২২৬,০৪৩ জন। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৫ সালের হিসেব মতে ২১,৩১৬ জন এবং ২০১৭ সালের একটি ইংরেজি জাতীয় দৈনিকের বরাত অনুযায়ী কেবল এক বছরে প্রাণহানি হয়েছে ৬,৮২৩ জনের। আইন প্রয়োগের অক্ষমতায় দুর্ঘটনার আসল কারণ।
দেশের বহুল প্রচলিত ইংরেজি দৈনিক দ্যা ডেইলি স্টার কর্তৃক ২০১৬-১৭ সময়ের মধ্যে করা একটি অনুসন্ধানমূলক গবেষণায় দেখা যায় যে বেপরোয়া বা ঝুঁকিপূর্ণভাবে যানবাহন পরিচালনা সম্পৃক্ত মৃত্যু উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
খবরে প্রকাশ হই যে চলাচলের অনুপযোগী যানবাহনই সড়ক দুর্ঘটনার পিছনে প্রধান কারণ। ঢাকা শহরে ১০ বছরে ৭০,০০০ গাড়ি কোন ধরনের উপযোগী সার্টিফিকেট নেই নি। চলাচলের অনুপযোগী যানবাহন রাস্তায় চলাচল করতে পারার কারণ হচ্ছে কর্তৃপক্ষের কঠোরভাবে আইন প্রয়োগের অসমর্থতা, সংস্থাটির রাজনৈতিক দাদাগিরি, লাইসেন্স সংগ্রহে দুর্নীতি, ঘুস, স্বজনপ্রীতি, বাস চালকদের সাথে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যোগসাজশ।
২০১৩ সালে কিছু বাংলাদেশী গবেষক কর্তৃক আরেকটি গবেষণায় পাওয়া যায় যে কেবল ৬০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা থানায় রিপোর্ট করা হয়। ৩৪ শতাংশ, সব চেয়ে বড় কারণ হল স্থানীয়ভাবে মামলার সমঝোতা করে ফেলা। তারা কি ধরনের সংঘর্ষ বা দুর্ঘটনা ঘটে থাকে তাও উল্লেখ করেন। তা সত্ত্বেও পথচারীদের আঘাত করাই দুর্ঘটনার প্রাথমিক ধরণ।
সড়ক দুর্ঘটনার অনেক খবর প্রকাশ না হওয়ার কারণ সমূহ
সারা বিশ্বে সড়ক ট্রাফিক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার প্রতি ১০০,০০০ এ ১৭.৪ জন। আমেরিকাতে ড্রাগ বা পদার্থ মাত্রাতিরিক্ত সেবন পরিমাণের মৃত্যুর হার প্রতি ১০০,০০০ এ ২৪.৫৮ জন যেখানে সড়ক ট্রাফিক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার প্রতি ১০০,০০০ এ ১০.৬ জন।
পৃথিবীর কোথাও না কোথাও প্রতি ২৫ সেকেন্ডে কেউ না কেউ মারা যাচ্ছে, সে হতে পারে আপনার বোন, বাবা, মা, ভাই, বন্ধু, সহপাঠী, সহকর্মী বা প্রতিবেশী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে আমি যখন এটি লিখছি, একদিনে ১,৯৪১ জন, এই মাসে ৩৯,৫২৩ জন, এই বছরে ৭,৬৭,২৩৯ জন মানুষ মারা গেছে ইতিমধ্যে।
মর্মান্তিক এই মৃত্যুর হার বার্ষিক ১.২, যা যক্ষ্মা বা ম্যালেরিয়া জনিত মৃত্যুর হার থেকে বড়। মৃতদের মাঝে ১৩৯ জন সাইকেল চালক, ৭৭২ জন পথচারী এবং ৭৮৬ জন মোটর সাইকেল চালক। পশ্চিম-ইউরোপীয় অঞ্চলে এই মৃতের সবচেয়ে নিম্নে এবং আফ্রিকা অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি: প্রতি ১০০,০০০ এ ২৬.৬ জন। বস্তুত, ৯০ শতাংশ সড়ক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে বাংলাদেশের মতো নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। এই অঞ্চলের দেশগুলোতে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক যানবাহন রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতদের মাঝে ২৬ শতাংশই সাইকেল চালক এবং পথচারী, মটর সম্বলিত দুই বা তিন উইলারদের হার ২৮ শতাংশ, কার চালকদের ২৯ শতাংশ এবং ১৭ শতাংশ অজ্ঞাত নামা।
অপরাধের যখন শাস্তি নাই বাংলাদেশে:
ট্রাফিক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বা শারীরিক ক্ষয়ক্ষতির জন্য কোন অপরাধীর সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত জেল সাজা হতে পারে ক্যানাডায়। ক্যানাডার দণ্ড-বিধি অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ যান পরিচালনার দরুন একজন অপরাধী চালকের যাবজ্জীবন শাস্তি হতে পারে। হল্যান্ডের রোড ট্রাফিক বিধি ১৯৯৫ অনুযায়ী একজন অপরাধী চালক ৫ বছরেরও যাবজ্জীবন অথবা জরিমানা অথবা উভয়ই হতে পারে। যুক্তরাজ্যের সড়ক ও পরিবহন আইন, ১৯৮৮ অনুযায়ী যে ব্যক্তি ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাবলিক স্থানে যন্ত্র-চালিত কোন যান চালায় সে অপরাধে দায়ী। ২০১৫ এর পূর্বে ভারত মোটর-যান আইন ১৯৮৮ অনুযায়ী তৃতীয় পক্ষ ইন্সিউরার বিল পাশ করে, বিভিন্ন আদালতের রায়ের উপর ভিত্তি করে ক্ষতিগ্রস্তকে ৫ লক্ষ থেকে ৫ কোটি রুপি পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ সংগ্রহ করে দেয়া হয়।
বাংলাদেশ মন্ত্রীসভা ২০১৭ সারে সড়ক নিরাপদ আইন ২০১৭ এ খসড়া পাশ করে যা সড়ক পরিবহন দুর্ঘটনার ভুক্তভোগিদের জন্য হাস্যকরভাবে অপ্রত্যাশিত। মাদকাসক্ত অবস্থায় বা মোবাইল ফোন ব্যবহার অবস্থায় মোটরযান চালনার দায়ে একজন চালকের ৫,০০০ থেকে ৩৫,০০০ পর্যন্ত অর্থনৈতিক জরিমানা সহ তিন মাস জেল শাস্তি কথা উল্লেখ করা হয়েছে এই খসড়া, কিন্তু প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা বা শারীরিক ক্ষয়ক্ষতির বিধান এতে উল্লেখ নাই।
তবে অপরাধী চালকদের কঠোর শাস্তির নিরিখে বাংলাদেশ সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপটি আসলেই প্রশংসনীয়। ৬ আগস্ট, ২০১৮, বাংলাদেশ মন্ত্রী পরিষদ বেপরোয়া উপায়ে যান চালনা দরুন প্রাণহানির জন্য স্বচ্ছ ৫ বছর শাস্তির বিধান অনুমোদন করেছে, যেখানে একজন চালক ফিটনেস-হীন মোটরযান চালনার জন্য ছয় মাস কারাদণ্ড, বা অনধিক ২৫,০০০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দন্ডে দণ্ডিত হতে পারে। দায়িত্বজ্ঞানহীন রীতিতে বেপরোয়া মোটরযান পরিচালনার দায়ে অপরাধী চালকদের যথাযথ শাস্তি প্রদানেই মন্ত্রী পরিষদ খুব তাড়াহুড়া করেই এই খসড়ার প্রণয়ন করে। ভুক্তভোগী আর ভুক্তভোগি পরিবার এবং সড়ক পরিবহন দুর্ঘটনায় মৃতদের সরকার কেবল পরিবহন মালিক আর দোষীদের কাছ থেকে চাঁদা বা অনুদানের মাধ্যমে ফান্ড ট্রাস্টি বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে চিকিৎসা খরচ প্রদানের প্রস্তাব করেছে। কিন্তু তাতে নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণের কথা উল্লেখ নেই, যা ভুক্তভোগির জন্য একটি উদ্বিগ্নের ব্যাপার।
কেবল আইনের প্রণয়নই কি সড়ক পরিবহন দুর্ঘটনা, দুর্দশা আর মোটরযান চালকদের বেপরোয়াপনা কমাতে পারে? শাস্তি বা তার জন্য কঠোরতর বিধি কি সড়কে জনসাধারণের প্রাণহানি কমাবে? নতুন আইন প্রণয়ন ব্যতীত সরকারে আর কোন রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব আছে কি? রাষ্ট্রের কাছে জনগণের কি দায়িত্ববোধ থাকা উচিৎ? অথবা নিরাপদ সড়ক, বাসযোগ্য আর শান্তি প্রিয় নগরের জন্য একজন নাগরিকের কি করণীয় আছে?
বাংলাদেশী প্রেক্ষাপটে সড়কে অপরাধী ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়াই পরিবহন দুর্ঘটনা হ্রাস, দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, সড়কে মানুষের মৃত্যু আর চালকদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ পরিবর্তনে সহায়ক নয়। পক্ষান্তরে, শাস্তি চালকদের প্রশাসনিক ঘুষ-কারবারে বাধ্য করবে, এবং দুর্নীতি একটি নতুন মাত্রার রূপ নিতে পারে। উপরে যেমন বলা হয়েছে এটি চালকদের মানসিক প্রণোদনা সন্ধানী মাত্রা কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে পারে যা তারা অনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে বজায় রাখে। যতদিন, ‘যত বেশী আপনি আমাকে আয় করে দেবেন, তত বেশী আপনি আপনার জন্য আয় করবেন’ এই ধারণা পরিবহন মালিকরা ধারণ করে, অথবা যতদিন আমার প্রাচুর্যতা ট্রাফিক কর্মকর্তাদের ক্রয় করার ক্ষমতা রাখে, বা আমরা রাজনৈতিক অবস্থান আমাকে আইন অমান্য করায় সহায়তা করবে।
অপরাধী চালকদের শাস্তির বেলায় Operant Conditioning এর মনস্তাত্ত্বিক ধারনা, এটি একটি শিক্ষা প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে Reinforcement বা Punishment এর দ্বারা কোন আচরণ-প্রবলতার আকৃতি ধারণ করে। ইতিবাচক এবং নেতিবাচক ফলাফল তৈরির মাধ্যমে Operant Conditioning Reinforcement বা Punishment এর উপস্থাপন করে যা প্রাণীদের মাঝে এক বিশেষ আচরণ বৃদ্ধি করে। Reinforcement এর ন্যায় Punishment ও ইতিবাচক এবং নেতিবাচক শাস্তির ফলাফল উৎপন্ন করে যা কোন একটি নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়ার হ্রাস করে। ইতিবাচক শাস্তি সংঘটিত হয় যখন শাস্তি ভবিষ্যতে অনুরূপ পরিস্থিতিতে এর সম্ভাব্যতা হ্রাস করে এমন কোন প্রতিক্রিয়া তৈরির জন্য দায়ী। যেমন ধরুন, যদি কোন আইন অমান্যকারী নাগরিক আইন প্রণয়নকারীর হাতে ধরা পড়ে এবং পরবর্তীতে ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থ আর খ্যাতি কাজে লাগিয়ে অপরাধ করে নিস্তার পেয়ে যায়, তখন সে ভবিষ্যতে একই আচরণের পুনরাবৃত্তি ঘটাবে যা তার জন্য হতে পারে আনন্দদায়ক।
নেতিবাচক শাস্তি সংঘটিত হয় যখন শাস্তির কারণে কোন প্রক্রিয়া উদ্দীপকের হ্রাস করে, তখন এটি অপসারণের শাস্তি হিসেবে পরিচিত, যেমন যদি কোন আইন প্রণয়নকারী সংস্থার কোন সদস্য অনৈতিক কর্মকাণ্ডে ধরা পড়ে, তখন তাকে জেল-হাজত নয় বরং তার জীবনধারণের প্রয়োজনীয়তা অপসারণ বাঞ্ছনীয়।
একা অপরাধীর শাস্তিই জনগণকে সড়কে প্রাণহানি থেকে রক্ষা করবেনা, এবং দুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়া থামাবে না যতক্ষণ না সড়কে কারো প্রাণহানি করে অসৎ উপায়ে পার পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়ে যায়। অতিরিক্ত উপার্জনের লক্ষ্যে অতিরিক্ত ট্রিপ মারার জন্য অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা, মোটরযান চালকদের ট্রিপ ভিত্তিক বেতন, আইনি প্রক্রিয়ায় পরিবহন মালিকদের রাজনৈতিক সংযোগের ব্যবহার, আইন লঙ্ঘনের অবিরত প্রবৃত্তি, চালকদের মরজিমতো যাত্রী উঠা-নামা হল ট্রাফিক আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কতিপয় বাঁধা যা কেবল শাস্তির মাধ্যমে অপসারণ সম্ভব নই, বিশেষ করে যে দেশে অর্থ আর রাজনৈতিক কলকব্জা দিয়ে আইনি ইস্যুতে প্রভাব ফেলা যায়।
আমাদের কি করতে হবে? জাপান সংযাগ:
তা বলতে হলে, পরিবহন দুর্ঘটনা বা সড়কের মর্মান্তিকতা হ্রাস করতে হলে জাপান মডেলের আইন বাস্তবায়ন, এবং শাস্তির পদক্ষেপ সমূহ বাংলাদেশী সমাজে বিবেচনা নেয়া দরকার।
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর পরই জাপান প্রাথমিকভাবে মোটরাইজড হওয়া পর দেশটির অর্থনৈতিক উন্নতির সাথে বৃদ্ধি পাই পরিবহন দুর্ঘটনা এবং পরিবহন সংক্রান্ত মর্মান্তিকতা যা ১৯৫০ থেকে শুরু হয়ে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত বলবত থাকে। পরিবহন দুর্ঘটনা দুরবস্থার চার যুগ ধরে চলতে থাকে: ১৯৭০ পর্যন্ত, ১৯৭০ থেকে ১৯৮১, ১৯৮১ থেকে ১৯৯২, এবং ১৯৯২ থেকে সমসাময়িক সময় পর্যন্ত। ২০০৪ সালের জাপানের মন্ত্রী পরিষদের হিসেব অনুযায়ী একুশ শতাব্দীর শুরুতে জাপানের পুরো বৎসরের পরিবহন প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা জনিত সামাজিক ব্যয় এবং অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল আনুমানিক ৮.৪ ট্রিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন।
জাপানের সড়ক পরিবহন দুর্ঘটনার উত্তান-পতনের চিত্র
৮৭ মিলিয়ন থেকে ১০৩.৭ মিলিয়নে পৌঁছে ১৯৫১ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত জাপানের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাই ২৩ শতাংশ। কেবল ১৫ বছর সময়ের মধ্যে জাপানের GDP ১৯৫৫ সালের ৮.৫ ট্রিলিয়ন থেকে ১৯৭০ সালে ৭৫.৫ ট্রিলিয়নে পৌঁছে যায় জাতীয় GDP প্রায় নয়গুণ বৃদ্ধি পায়। প্রথম যুগে দেশটির দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নই ছিল ক্রমবর্ধমান প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার কারণ , প্রত্যক্ষ GDP বৃদ্ধি এবং বেগবান যা মোটরযান মালিকানায় পরিবর্তনের ফলে সংঘটিত হয়েছিল। অধিকন্তু, সুবিধা উন্নয়ন দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মোটরায়িতকরণের সাথে তাল মিলাতে পারেনি।
জাপানের জাতীয় পলিসি এজেন্সি কর্তৃক সংগৃহীত পরিবহন নিরাপত্তা পরিসংখ্যা অনুযায়ী প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা সাধারণত কোন দুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে মৃত্যুকে বুঝায়।
১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে যখন নন-প্রফেশনাল চালকদের অপরাধী এবং ভৃক্তভোগি হিসেবে তাদের সম্পৃক্ততা পরিষ্কার হই, জাপানী কর্তৃপক্ষ দক্ষ চালক নিয়োগ শুরু করে এবং অদক্ষ, অযোগ্য এবং মদ্যপায়ী চালকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ শুরু করে। উন্নততর ট্রাফিক সিগনাল স্থাপন, সড়ক মার্কিং সন্নিবেশের পর জাপানী কর্তৃপক্ষ ট্রাফিক আইন মেনে চলাকে উৎসাহিত করে সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করে।
পরিবহন এবং নিরাপত্তা গবেষক টাকাশি ওগুছি বলেন, “ ১৯৬৭ সালে কর্তৃপক্ষ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে একটি বাধ্যতামূলক ‘সড়ক প্রশিক্ষণ কর্মসূচী’ স্থাপন করে এবং কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ কোর্স যা চালকদের জন্য প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর লাইসেন্স নবায়নের সময় অতিক্রম করতে হতো। ট্রাফিক আইন এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি ট্রাফিক সংকেত পদ্ধতি এবং সংকেত নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির উন্নয়নও কার্যকরী পদক্ষেপ। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের মধ্যে রয়েছে সড়ক ব্যবহারকারীদের শিক্ষা এবং ট্রাফিক আইন প্রণয়নে যথাযথ পরিচিতি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান মোটরায়িত হওয়ার পর থেকে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে প্রধান চারটি যুগ রয়েছে যেমন, ১৯৭০ পর্যন্ত, ১৯৭০ থেকে ১৯৮১, ১৯৮১ থেকে ১৯৯২, এবং ১৯৯২ থেকে সমসাময়িক সময় পর্যন্ত। নিচে আমরা লক্ষ্য করব কিভাবে জাপান সর্বনাশা সময় থেকে একটি পরিত্রাণমূলক বিদ্যমান পরিস্থিতিতে উপনীত হয়েছে।
প্রথম যুগের ‘পরিবহন যুদ্ধ’ খ্যাত সময়কালে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা খুব দ্রুতই বৃদ্ধি পাই এবং তা ১৯৭১ সালে একটি বার্ষিক মোট সংখ্যায় পৌঁছে যায়। জাপানের জাতীয় সরকার এবং জাপানের জনগণও আসন্ন এই ‘পরিবহন যুদ্ধ’ কে গুরুত্বের সাথে আমলে নেয় এবং সরকারও প্রাণঘাতী পরিবহন দুর্ঘটনা কমাতে বিস্তীর্ণ নিয়ন্ত্রণ শুরু করে।
তারপর, (১৯৭০ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত), ১৯৭০ দশকে বার্ষিক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা হ্রাস পায় এবং ১৯৮১ সালে তা ৮,৭১৯টি পৌঁছে। এই সময়টি ছিল জাপানের দ্বিতীয় যুগ যখন বার্ষিক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার প্রবণতা ছিল নিম্নমুখী।
পরিবহন নিরাপত্তা ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টার পরও (১৯৮১ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত) বার্ষিক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা পুনরায় বৃদ্ধি পেয়ে যাই জাপানের তৃতীয় যুগে যার ১১,৪৫২টি তে পৌঁছে যায়।
চতুর্থ এবং শেষ যুগে-যার প্রারম্ভ ১৯৯২ সালে- বার্ষিক দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যেতে দেখা যায় কিন্তু বার্ষিক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার সংখ্যা হ্রাস পাই। প্রথম যুগে প্রাণঘাতীর প্রবণতা বৃদ্ধি ছিল স্পষ্টতর।
বার্ষিক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার সংখ্যা পরিবর্তিত হয়ে ১৯৫১ সালের ৪,৪২৯টি থেকে ১৯৭০ সালে ১৬,৭৬৫টিতে চলে পৌঁছে যায়, অন্য অর্থে, বিশ বছর আগের চেয়ে ১৯৭০ সালে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার সংখ্যা চার গুণের অধিক বড়। পরিবহন মালিকানা, ইতিমধ্যে, ১৯৫১ সালের ৪১৩ হাজার পরিবহন ১৯৭০ সালে বেড়ে ১৬,৫২৮ হাজারটিতে পৌঁছে যায়, যা কেবল দুই দশক সময়ের মধ্যে চল্লিশ গুন বৃদ্ধি পায়।
সারা দেশে পথচারী পারাপারের সেতু ১৯৭০ সালে ৫,০০০ টি এবং ১৯৮০ সালে লাফ দিয়ে প্রায় ৯,০০০ টিতে পৌঁছে যায়। অদম্য গতির এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা প্রায় ২০০০ সাল পর্যন্ত বলবত থাকে। যখন পথচারী পারাপারের সেতু নির্মাণ শুরু হয়, নতুন কাঠামো সমূহ প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা থেকে পথচারীদের রক্ষায় এক বিরাট অবদান রাখে: সেতু স্থাপনের আগে ও পরে দুর্ঘটনা সংখ্যার তুলনায় ছয়মাসে মধ্যে পরিবহন দুর্ঘটনায় পথচারীর সম্পৃক্ততার সংখ্যা ৮৫ শতাংশ হ্রাস পেয়ে যায়।
অনেকে অবশ্য বিস্তীর্ণ পরিপক্ব পরিবহন নিরাপত্তা প্রক্রিয়া পলিসিকে ৫ ভাগে বিভক্ত করতে পারে, যেমনটা নিম্নে উল্লেখ করা হল:
পরিবহন নিরাপত্তা কাঠামো এবং সড়ক পরিবহন পরিবেশ:
জাপানে পরিবহন সংকেতের সংখ্যা খুব দ্রুতই ১৯৭০ সালের ১৫,০০০টি থেকে ১৯৮০ সালে প্রায় ৯৫,০০০ পৌঁছে যায় ,যা ২০১৩ সালে হয়ে উঠে প্রায় ২,৫০,০০০ যা সড়ক দুর্ঘটনা সংখ্যা হ্রাস করণে ছিল বিশেষ কার্যকর। দেশটি পলিসি নির্ধারকেরা উচ্চ মাত্রার পরিবহন দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকা নির্বাচন, পরিবহন দুর্ঘটনার পেছনে কারণ সনাক্ত করণে বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ, দুর্ঘটনার ঝুঁকি হ্রাস করণে বিধান নির্ণয় এবং প্রয়োগ, এবং সুপরিচিত PDCA চক্র (Plan, Do, Check, and Action) অনুযায়ী প্রয়োগকৃত বিধানের মূল্যায়ন এর মতো কার্যক্রম শুরু করে।
ব্যবস্থাপনা এবং আইনের প্রয়োগ:
মোটরিকরণে প্রক্রিয়ার উন্নতির সাথে আইন প্রণয়নকারীরা পরিবহন এবং বিভিন্ন ধরনের পরিবহন ব্যবস্থাপনারও উন্নয়ন উপরিভাগের পরিবহন বাহনের ঘটিয়েছেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৫১ সালে সড়ক পরিবহন বাহন আইন বাস্তবায়ন করা সহ জাপানে আরও বহুবিধ নিরাপত্তা মান নির্ধারণ করা হয়। সংশোধিত আইন পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালের পর উৎপাদিত সকল যাত্রী বহনকারী যানবাহনে সিটব্যাল্ট রাখা বাধ্যতামূলক করে। ইতিমধ্যে, ১৯৭১ সালের সড়ক পরিবহন আইন পরিবহন চালক এবং যাত্রীদের এক্সপ্রেসওয়েতে কারে ভ্রমণকালে সিটব্যাল্ট ব্যবহার করা প্রয়োজনীয় করে দেয় কিন্তু কোন নির্দিষ্ট শাস্তির বিধান করেনি। ১৯৮৫ সালের সংশোধনীতে কারের সামনের সিটে বসা লোকদের এক্সপ্রেসওয়েতে সিটব্যাল্ট পরিধানকে বাধ্যতামূলক করা হয় যা ট্রাফিক আইন অমান্যকরণের সাথে পয়েন্টের সংযোগ ছিল।
১৯৮৬ সালে অন্যান্য সড়কের ধরনেও সেই একই ব্যবস্থাপনার প্রয়োগ করা হয় এবং ২০০৭ সালে তা কারের পেছনের সিটে বসা যাত্রীদের জন্যও বাধ্যতামূলক করা হয়। জাপানের অটোমোবাইল ব্যবহারকারীদের সংগঠন ‘Japan Automotive Federation (JAF)’ এর তথ্যানুযায়ী গড়ে ৯৮ শতাংশ, ৯৩ শতাংশ এবং ৩৫ শতাংশ যথাক্রমে চালকদের, যাত্রীর সামনের, এবং পেছনের সিটে সিটব্যাল্ট ব্যবহার করেছে। সিটব্যাল্ট ব্যবহারের কার্যকারিতা দুর্ঘটনা জনিত জখম এবং প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা হ্রাসের কারণ হিসেবে দেখা গেছে।
শিক্ষা আর প্রচারণা:
গবেষণা লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়া এবং ‘সড়ক পরিবহন আইনের’ পয়েন্ট প্রক্রিয়াও এর আওতায় নিয়ে আসে ১৯৬৭ সাল থেকে, মোটর সাইকেলের ক্ষেত্রে ১৬ বা তারও অধিক, নিয়মিত যানবাহনের জন্য ১৮ বা তারও অধিক, বড় আকারের যানবাহনের ক্ষেত্রে ২০ বা তারও অধিক, এবং পরিবহন ব্যবসায়-উদ্দেশ্যের যানবাহনের ক্ষেত্রে ২১ বা তারও অধিক বয়স বিভিন্ন ধরনের ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়।
১৯৬৯ সালে পয়েন্ট পদ্ধতির সূচনা করা হয়। যদি কোন চালক কোন দুর্ঘটনা ঘটায় বা পরিবহন অপরাধ করে থাকে তাহলে সেই চালকের বেলায় কিছু সংখ্যা পয়েন্ট জমা হবে; যখন সেই চালকের পয়েন্ট নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে যায়, তাহলে কর্তৃপক্ষ তার লাইসেন্স বাতিল বা রদ করতে পারে, যা ‘ প্রয়োজনীয়তা অপসারণের শাস্তি’। পয়েন্ট জমা করা কোন অপরাধ বা অপরাধের শাস্তি নয়, এবং আইনানুগ মকদ্দমা তখনই পরিস্থিতির আওতায় আসে যখন কোন চালকের মোট পয়েন্ট নির্দিষ্ট কোন পর্যায় অতিক্রম করে।
জনগণের চাহিদা মিটাতে এবং আরও কার্যকরী উপায়ে মারাত্মক আকারের পরিবহন দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে পলিসি নির্ধারকেরা শাস্তির পয়েন্ট পুনরায় সংশোধন, পরিমাণ পরিবর্তন করে শাস্তির পয়েন্টের ভিত্তিতে নতুনভাবে অপরাধের সূচনা করে।
জাপানে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া অনেক কঠিন, সময় সাপেক্ষ, এবং প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং দক্ষতা লাভ একটি বহুমূল্য প্রক্রিয়া। ২০১৫ সাল অনুযায়ী অনুমোদিত ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ স্কুলে ড্রাইভিং শিক্ষণ কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের একটি সাধারণ বাহনের লাইসেন্স পেতে Operational Rules for Road Traffic Law এর আওতায় ৩৪ ঘণ্টার একটি প্রাক্টিক্যাল প্রশিক্ষণ এবং আইন আর যানবাহন কলকব্জা সম্পর্কিত ২৬ ঘণ্টার একটি লেকচার শেষ করতে হয়। সড়ক পরিবহন আইন এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সমূহের সনদ এবং মান নির্ধারণ করে, আর প্রশিক্ষণ কোর্সের পাঠ্যসূচি ট্রাফিক ব্যুরোর সহায়তায় জাতীয়ভাবে মান-নিয়ন্ত্রণের ভিত্তিতে গঠিত।
প্রাথমিক লাইসেন্স প্রধানের সময় অনুসরণকারী চালকদের শিক্ষাও পরিচালিত হয়, এবং পরবর্তী ক্লাস সমূহ প্রতি তিন বছর অন্তর লাইসেন্স নবায়নের সময় পরিচালিত হয়। ১৯৯৪ সালের সড়ক পরিবহন আইনের সংশোধনীর সাহায্যে নিবেদিত উত্তম চালকদের জন্য লাইসেন্স নবায়ন কাল (যে চালকরা বিগত ৫ বছরে কোন শাস্তির পয়েন্ট সংগ্রহ করেনি) ৫ বছর বাড়িয়ে দেয়া হই। যে চালকেরা দুর্ঘটনার কারণ হয়েছে বা লাইসেন্স নবায়নের কাছাকাছি সময়ে কোন ধরনের আইন অমান্য করেছে তাদেরকে বিশেষ লেকচার কোর্সের প্রয়োজন পড়েছে।
পরিবহন নিরাপত্তার মান উন্নয়ন:
জাপানে কাঠামোর নিরাপত্তার মান এবং সকল অটোমোবাইল কার্যক্রম ১৯৫১ সালের প্রতিষ্ঠিত এবং মাঝে মাঝে মানকে আরও তীব্র করার লক্ষ্যে এবং, মাঝে মাঝে ব্যবস্থাপনাকে শিথিল করতে সংশোধিত সড়ক পরিবহন বাহন আইন মেনে চলতে হয়। ১৯৭০ সালের পূর্বে আধিপত্য বিস্তারকারী পরিবহন দুর্ঘটনার ধরনের মধ্যে মোবাইল/দ্রুত অস্ত্র দুর্ঘটনা নামে পরিচিত ছিল: পরিবহন যা পথচারীদের ক্ষয়ক্ষতি আর মৃত্যুর কারণ হয়।
১৯৭০ দশকের শুরুর দিকে অবশ্য তথাকথিত দ্রুত কফিন রকমের একটি দুর্ঘটনার প্রবণতা বেড়ে যায় এবং এটি এমন এক ধরনের দুর্ঘটনা যা মোটরগাড়ির চালক বা যাত্রীর প্রাণহানি ঘটায়। যখন জনগণের তদন্ত বৃদ্ধি পাই আইন প্রণয়নকারীরা ১৯৭৩ সালে যানবাহন নিরাপত্তার মান আরও শক্তিশালী করে তুলে এবং পরিবহন নিরাপত্তার মান মজবুদ করতে গতি পরিমাপ যন্ত্র, স্পীড মিটার, তিন-ধাপ বিশিষ্ট ব্রেক পদ্ধতি, এবং বড় আকারের ট্রাকের জন্য সিটব্যাল্ট, বেপরেস্ট, আর যাত্রীবাহী কারের ক্ষেত্রে অন্যান্য বস্তু, যা সংঘর্ষ সংগঠিত হওয়ার সময় যাত্রীদের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করার জন্য পরিকল্পিত পরিবহন নিরাপত্তা প্রক্রিয়া মজবুদ করার জন্যে এই তিনটি মৌলিক ধারণা সংমিশ্রণ ঘটায়।
মজার ব্যাপার হল তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় দুই মিলিয়ন যানবাহন অ-নিবন্ধিত, কেবল ২.৫ মিলিয়ন বাহন নিবন্ধনকৃত এবং কেবল ১.২৩ মিলিয়ন দক্ষ চালক আছে। অধিকন্তু, ১ মিলিয়নেরও অধিক পরিবহনের মধ্যে কেবল ৬০০,০০০ যানবাহন প্রতি বছর ফিটনেস পরীক্ষা করে।
ইমার্জেন্সি মেডিকেল সেবা:
যদিও জরুরি স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম পরিচালনা কোন দুর্ঘটনা প্রতিরোধমূলক প্রক্রিয়া নই, দৃঢ় জরুরি স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম থাকা নিঃসন্দেহে পরিবহন দুর্ঘটনার কারণে সংঘটিত হওয়া মানবীয় ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করতে পারে। জাপানে ১৯৭২ সালের ২,৮৪৩ টি জরুরি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সংখ্যা ১৯৮৩ সালে ৩,৪৭১ টিতে বৃদ্ধি পায়। ১৯৬৪৫ সালে উচ্চ মাত্রার সড়ক দুর্ঘটনা এবং প্রাণঘাতী সড়ক দুর্ঘটনা হওয়া স্বত্বেও তুলনামূলকভাবে এ্যাম্বুলেন্স কেবল ১০০,০০০ জন লোক বহন করতে সক্ষম হয়। ১৯৮৫ সালে প্রাণহানির হার বা প্রতি দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ছিল প্রায় ০.০২২ জন যা ২০১৩ সালের ০.০০৭ এর চেয়ে অধিক বড় একটি সংখ্যা, যখন এ্যাম্বুলেন্সে বহন করার ক্ষমতা বেড়ে ৫৩০,০০০ জনে দাড়ায়। এ্যাম্বুলেন্সে বেশী সংখ্যা লোক বহন করতে সমর্থ হওয়াটা সম্ভবত প্রাণহানি হ্রাসে একটি বিশেষ কারণ। পরিবহন দুর্ঘটনা লোকজনের উপর মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয় এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি সময়ে স্বাস্থ্য খাতে প্রযুক্তির সম্প্রসারণও জীবন বাঁচাতে ভূমিকা রাখে। জাপানের এইসব অর্জন নিশ্চিন্তে, বিশেষ করে সম্প্রতি সময়ে, প্রাণঘাতী পরিবহন দুর্ঘটনা হ্রাস করতে সহায়তা করে।
দেশের মোট উৎপাদনের স্বাস্থ্য বিনিয়োগে ২.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত অন্যান্য সংকটপূর্ণ খাতগুলোর একটি, যে দেশে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ব্যয় এখনও ৬৪ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে দুর্ঘটনা পরবর্তী সময়ে রোগীদের প্রাণহানি এবং শারীরিক ক্ষয়ক্ষতি কমাতে বাংলাদেশে জরুরী স্বাস্থ্য সেবা খুব নগণ্য। দুর্ঘটনাস্থলে এ্যাম্বুলেন্স পাওয়া, নিকটবর্তী এলাকায় জরুরী স্বাস্থ্য সেবা পাওয়াই হল আমাদের লক্ষ্য যার বিষয়ে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা দরকার।
আজ যখন আমরা জাপানকে অন্যান্য যে দেশগুলোতে পরিবহন হতাহত আর প্রাণহানির ঘটনা সবচেয়ে কম তাদের সাথে তুলনা করি তখন দেখা যায় জাপান, ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভাল অবস্থানে রয়েছে। যুক্তরাজ্য এবং হল্যান্ড সবসময়ই ভাল। সবচেয়ে সমসাময়িক পরিসংখ্যান দেখলে এটা প্রতীয়মান হয় যে জাপানের প্রাণহানির হার প্রতি মিলিয়নে ০.৪১ জন যা বাংলাদেশে প্রতি ১০০,০০০ জনে ১৩.৬ জন, জার্মানিতে ০.৪৪ জন প্রতি মিলিয়নে; অন্য অর্থে হল্যান্ড আর যুক্তরাজ্যের প্রাণহানির হার যথাক্রমে প্রতি মিলিয়নে ০.৩৪ এবং ০.২৮ জন।
জন জীবনকে আরামদায়ক, সহজ আর কারো অস্তিত্বের প্রতি হুমকি নিরবচ্ছিন্ন করণে সরকারকে বা রাষ্ট্রকে নগরায়নের সম্ভাব্য সব কাজ করার প্রত্যাশা না করে দেশের সচেতন আর আইন মান্যকারী জনগণ হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে সবার কিছু পৌরনৈতিক দায়িত্ব পালন করার আছে। আমরা কেবল আশা করতে পারিনা যে দোলনা থেকে করর পর্যন্ত রাষ্ট্র বা সরকার আমাদের নিরাপত্তা বা শান্তি প্রদানকারী এজেন্ট হিসেবে প্রত্যাশা করতে পারিনা। আমাদের অধিকতর বাসযোগ্য, শান্তি-প্রিয় দেশের প্রত্যাশা করতে হলে সরকার বা রাষ্ট্রের মতো আমাদেরও সমান দায়বদ্ধতা রাষ্ট্রের প্রতি রয়েছে। যত স্বেচ্ছাসেবী দায়বদ্ধতা নিয়ে যত বেশী আমাদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পাবে তত কম আমরা নিরাপত্তাহীন আর নিজেদের শাসিত মনে করবো।
উপসংহার:
প্রতি ১০০,০০০ জনে ২.৮ জন মৃতের হান নিয়ে সুইডেনই নিরাপদ সড়ক কার্যক্রমে সর্বাগ্রে রয়েছে। ১৯৯০ এবং ২০১৫ সালের মধ্যকার সময়ের ব্যবধানে দেশটিতে ৬৬ শতাংশ সড়ক পরিবহন মৃত্যু কমেছে। সুইডেনের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝা যায় কিভাবে দীর্ঘস্থায়ী, বছর ব্যাপী পরিকল্পনা প্রক্রিয়া, পাকাপোক্ত প্রাতিষ্ঠানিক নেতৃত্বের কারণে নতুন ভিত্তিক হস্তক্ষেপ পদক্ষেপ, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ এবং সড়ক নিরাপত্তা অর্জনে সরকার, ব্যবসায় এবং সুশীল সমাজের উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য উন্নত ফলাফলের কারণ হতে পারে।
জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সড়ক নিরাপত্তা অর্জনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যথাযথ পরিচালনা দক্ষতার প্রয়োজন। এই দক্ষতা প্রাতিষ্ঠানিক নেতৃত্বের মাধ্যমে দায়বদ্ধ কর্তৃপক্ষ, বহু সেক্টর ভিত্তিক ব্যবস্থা, দীর্ঘস্থায়ী অনুদান এবং পরিমাপ, লক্ষ্য এবং উন্নতি পর্যবেক্ষণের জন্য উপাত্ত পদ্ধতি; এ সবের মধ্য দিয়ে প্রদর্শিত হওয়া দরকার।
Read this in English
সড়ক নিরাপত্তার ‘দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’র ৯,১০ এবং ১১ নাম্বার লক্ষ্য সমূহ হল, ২০৩০ সালের মধ্যে চালকদের মাদক সেবন সম্পর্কিত পরিবহন ইনজুরি এবং প্রাণহানি অর্ধেকে নামিয়ে নিয়ে আসা, মানসিক উদ্দীপনামূলক উপাদান গ্রহণ হ্রাস করা, মোটরযান পরিচালনার সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা এবং সকল দেশে পেশাজীবী চালকদের ড্রাইভিং সময় এবং বিশ্রামের সময় নিশ্চিত করা।
সড়ক নিরাপত্তা এবং সক্রিয়তায় অবিচ্ছেদ্য পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ১৯৯৬ এবং ২০০৬ সাল সময়ের মধ্যে কলম্বিয়ার বাগোটায় পরিবহন মৃত্যু ৫০ শতাংশ হ্রাস পায়। ১৯৭২ সাল থেকে কোরিয়া প্রজাতন্ত্র OECD দেশগুলোর মধ্যে পরিবহন প্রাণহানির ক্ষেত্রে তৃতীয় বৃহত্তম হ্রাস লক্ষ্য করেছে। বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন মৃত্যু এবং শারীরিক ক্ষয়ক্ষতির প্রতিরোধ করণে সংহত কৌশলের বেলায় প্রধান ঝুঁকিপূর্ণ খাত সমূহে আইন প্রণয়ন এবং ব্যবস্থাপনার প্রয়োগ দুষ্কর উপাদান।
পক্ষপাতিত্বহীন আইনের প্রয়োগ, পরিবহন ও পথচারী বান্ধব তারকা মানের সাইড-ওয়াল্ক, আশ্রয় ছাউনি সহ চিহ্নিত পারাপার, সড়ক প্রজ্বলন পদ্ধতি, বাই সাইকেল সুবিধায় নির্ধারিত স্থান, প্রধান সড়ক পারাপারে সু-উচ্চ প্লাটফর্ম, নির্ধারিত, আলাদা মোটর সাইকেল লেইন, কেন্দ্রীয় অঙ্কিত রেখা, নিকটস্থ সড়ক সড়ক হ্যাজার্ড, সরল সমতলতা, আসন্ন পরিবহনের জন্য পৃথক নিরাপত্তা বেষ্টনী, সড়ক-ঝুঁকি রক্ষা নির্মাণ পরিবহন দুর্ঘটনা থামাতে বাধ্য। যদি না আইনকে যথাযথ শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, অর্থনৈতিক প্রণোদনা, পরিবহন আইন অনুসরণে জনসচেতনতার সাথে প্রয়োগ করা হয় তাহলে ‘নিরাপদ সড়ক’ এর ক্ষেত্রে কেবল শাস্তি আমাদের প্রত্যাশিত ফল দেবেনা।
জীবন যাপন স্বাস্থ্যকর রাখা, পরিবহন শৃঙ্খলা বজায় রাখা, রাষ্ট্রের বিদ্যমান কাঠামোর সঠিক ব্যবহার, সঠিক অভ্যাস অনুশীলনে আমাদের সন্তানদের শিক্ষা দেয়া, সরকার কর্তৃক ক্ষমতার অপব্যবহারকে সংযত রাখা, সমাজের সুবিধা বঞ্চিতদের ন্যায়পরায়ণতার পক্ষে কথা বলা, সরকার কর্তৃক রাষ্ট্রীয় সংগঠন সমূহের রাজনীতিকরণের বিপক্ষে সোচ্চার হওয়া, আইন-শৃঙ্খলার পক্ষে অবস্থান নেয়া, সভ্য আচরণ করা, জনগণের অধিকার ও সুবিধা বিবেচনায় নেয়া, নৈতিক আচরণের পক্ষে থাকা এবং সময়ানুসারে কর প্রদান হল রাষ্ট্রের জন্য জনগণের করণীয় কিছু অত্যাবশ্যক বিষয় যা নাগরিকের সম্পৃক্ততা ব্যতীত অসম্ভব। নিরাপদ সড়ক আর নিরাপদ জীবন হোক সবার।